• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

ঘরে বসে সনদ বানাতেন বোর্ড কর্মকর্তা, সর্বনিম্ন রেট ৩৫ হাজার

  • ''
  • প্রকাশিত ০৪ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বরখাস্ত হওয়া কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. শামসুজ্জামান। শুধু তাই নয়, নিজের বানানো সনদ বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করে দিতেন। বানানো ফলাফল অনুযায়ী টাকা নিলেও তাঁর ন্যূনতম বরাদ্দ ছিল ৩৫ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার সনদ বিক্রি করেছেন তিনি।

ওই কর্মকর্তাসহ তাঁর এক সহকারীকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ। আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়। 

গ্রেপ্তার হওয়া ওই কর্মকর্তার নাম—মো. শামসুজ্জামান। তিনি বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট পদে কর্মরত। তাঁর সহযোগী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় ফয়সাল হোসেন নামের একজনকে। গত সোমবার ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। 

হারুণ অর রশীদ বলেন, ‘শামসুজ্জামান শিক্ষাবোর্ড থেকে কাগজ এনে বাসায় বসে সার্টিফিকেট বানাতো। রেজাল্ট অনুযায়ী সে টাকা নিতো, তবে ৩৫ হাজারের কমে সে কাজ করতো না। এরপর সার্টিফিকেট বানানোর পরে সেই রেজাল্টের তথ্য শিক্ষাবোর্ডের সার্ভারে আপলোড করে দিত। এই সার্টিফিকেট দিয়ে অনেকে বিদেশে গেছে, অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে, আবার অনেকে চাকরি করছে। দেশে-বিদেশে চাকরিরত অনেকের সনদে গরমিল পাওয়ায় চাকরিচ্যুতও করা হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে চুরি করে নেওয়া বিপুল পরিমাণ ফাঁকা নম্বরপত্র ও সনদ নিয়ে রাজধানীর পীরেরবাগ এলাকায় নিজের বাসা ও পার্শ্ববর্তী এক বাসায় গড়ে তুলেছিলেন সনদ দেওয়ার আরেক কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। নম্বরপত্র, সনদ ও এসব তৈরির সরঞ্জামসহ ডিবি পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েন শামসুজ্জামান ও তাঁর সহযোগী ফয়সাল হোসেন। ধরা পড়ার পরদিন শামসুজ্জামানকে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। বর্তমানে শামসুজ্জামান ও ফয়সাল রিমান্ডে রয়েছেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে দুজনের কাছে থেকে চমকে ওঠার মতো তথ্য পাওয়া গেছে।’ 

গোয়েন্দা বিভাগের এ কর্মকর্তা জানান, পনেরো বছর আগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে যোগ দেন এ কে এম শামসুজ্জামান। চাকরিতে যোগদানের পর থেকে সারে পাঁচ হাজার সনদ বিক্রি করেছেন এই কর্মকর্তা। সনদ বাণিজ্যের নানা প্রক্রিয়ায় তার কাছে গ্রাহক নিয়ে আসতেন দেশের আনাচকানাচে গড়ে ওঠা কারিগরি স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষেরা। যেসব প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ মধ্যস্থতা করে গ্রাহক নিয়ে আসতেন, তাদের নামের দীর্ঘ তালিকা পেয়েছে। 

এ ছাড়া সনদ বাণিজ্যের বিষয়ে জানতেন বোর্ডের ছোট-বড় সব কর্তারাই। গোয়েন্দাদের কাছে রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদে এসব স্বীকার করেছেন শামসুজ্জামান। তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে নাম পাওয়া শিক্ষক ও বোর্ড কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। 

সব পক্ষকে সন্তুষ্ট রেখেই শামসুজ্জামান এই সনদ বাণিজ্য চালাতেন উল্লেখ করে হারুণ অর রশীদ বলেন, ‘সবাইকে ম্যানেজ করে অর্থাৎ শিক্ষাবোর্ডের সকলের সঙ্গে যোগসাজশ করে কাগজ বের করতো এই কর্মকর্তা। এমনকি তার এই সার্টিফিকেট তৈরির কারখানার বিষয়ে অনেক গণমাধ্যমের সাংবাদিকরাও জানত। সকলেই তার কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়েছে। তার অবৈধ সনদ বাণিজ্যের বিষয়ে একাধিকবার তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। বোর্ডের কর্মকর্তারা তদন্ত করতে গিয়ে দেখলেন অনেক কিছু বেড়িয়ে আসছে। ফলে সেটাও ধামাচাপা পড়ে যায়। নিজেরা না বোঝার দোহাই দিয়ে, অভিযোগ তদন্তের জন্য পাঠানো হয় কম্পিউটার কাউন্সিলে। তারাও চুপ হয়ে যায়।’ 

জিজ্ঞাসাবাদে যেসব শিক্ষক ও বোর্ড কর্মকর্তাদের নাম এসেছে, তাদের সংশ্লিষ্টতা যাচাই করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। 

এ বিষয়ে কারিগরি বোর্ড চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা কোনো দিনই জানতাম না এগুলো আমাদের বোর্ডের লোকজন করে। আমরা জানতাম, এসব সার্টিফিকেট নীলক্ষেত থেকে বানানো হয়। এখন যেটা জানলাম, সেটা তো মেনে নেওয়া যায় না। যে এই কাজে লিপ্ত, তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আরও যারা জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads